
মনীষা কল্যাণ বিশ্বের ফুটবল মঞ্চে একেবারে চমকে দিয়েছেন। গড়ে ফেলেছেন বড় রেকর্ড। অ্যাপোলন লেডিস এফসি-র হয়ে খেলেনন তিনি। সাইপ্রাসের এই দল উয়েফা মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ালিফায়ার রাউন্ড ওয়ানে ৯-০-তে উত্তর মেসিডোনিয়ান দল লুবোটেনকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এই জয়ের সঙ্গে তারা যোগ্যতা অর্জন পর্বের চূড়ান্ত রাউন্ডে পৌঁছে গিয়েছে।
ভারতীয় উইঙ্গার ৪৬তম মিনিটে বিকল্প হিসেবে মাঠে নামেন। এবং তিনি তিনটি গোলের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নেন। তিনটি গোলে অ্যাসিস্ট করার রেকর্ড করেন মনীষা। উল্লেখ্য, প্রথমার্ধেই লুবোটেন পাঁচ গোল খেয়ে গিয়েছিল।
৪৬তম মিনিটে নামার পর মনীষা অ্যাপোলনের বাঁ-দিক থেকে ক্রমাগত আক্রমণে উঠতে থাকেন। সাভা ৫৬তম মিনিটে ২১ বছর বয়সী উইঙ্গারের জন্য বাঁ-দিক দিয়ে একটি মনোরম পাস খেলেন এবং তিনি বল নিয়ে দুরন্ত ছন্দে উপরে উঠে ক্রস জোয়ানা ডান্তাসকে। তিনি বল গোলে ঠেলতে ভুল করেননি।
৭৯তম মিনিটে মনীষা কল্যাণ আবার সাভার থেকে পাস পেয়ে প্রতিপক্ষ ফুলব্যাককে ডজ দিয়ে শান্ত ভাবে ক্রস বাড়ান সিডনি নাসেলোকে। তিনি গোল করে ব্যবধান বাড়ান।
এর পর ৯০তম মিনিটে তাঁর চূড়ান্ত সহায়তা আসে যখন মনীষা বাইলাইনের কাছে একটি লম্বা বল পান। পাসটি স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে নামিয়ে এনে, তিনি ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এলেনি জিয়ানুকে পাস বাড়েন। তিনি এই বল ধরে ৯-০ করতে একেবারে ভুল করেননি।
পঞ্জাবের হোসিয়ারপুর জেলার মুগোওয়াল গ্রামে জন্ম মনীষার। ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন বলে গ্রামবাসীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। জারি হয়েছিল ফুটবল না খেলার ফতোয়াও। দিনের পর দিন কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল মনীষার পরিবারকে। কিন্তু হার মানেননি তিনি। অপমানের যন্ত্রণা নিয়েই স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন। পাশে পেয়েছিলেন বাবা আর মাকেও।
মনীষার ফুটবলার হয়ে ওঠার কাহিনিও কম আকর্ষণীয় নয়। শৈশবে স্বপ্ন ছিল অ্যাথলিট হওয়ার। ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়তেন। পাশাপাশি বাস্কেটবলও খেলতেন। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার পরেই বদলে যায় তাঁর জীবনের লক্ষ্য। স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার। তিনি কিছুটা জোর করেই মনীষাকে জেলা ফুটবল দলের ট্রায়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন। অসাধারণ খেলে জেলা দলে নির্বাচিত হয়ে এত আনন্দ হয়েছিল তাঁর যে, মাঠে দাঁড়িয়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ফুটবলার হওয়ার। সেই থেকে শুরু। অনেক বাধা পেরিয়ে এখন বিশ্ব মঞ্চেও চমকে দিচ্ছেন মনীষা।
Leave a Reply