
ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতায় ভরা গত মরশুমে মরসুমে ক্লেটন সিলভার সঙ্গে তিনিই ছিলেন ব্যতিক্রম। লাল-হলুদ ভালো পারফরম্যান্স না করতে পারলেও নজর কেড়েছিলেন ২৪ বছরের নওরেম মহেশ সিং। আইএসএলে প্রথম ভারতীয় হিসাবে হ্যাটট্রিকের দুরন্ত রেকর্ড করেছিলেন তিনি। লাল-হলুদের হয়ে সব মিলিয়ে করেছেন ৮ গোল। গত বছর সুপার কাপে ছিল ৩ গোল। ইতিমধ্যেই জাতীয় দলের জার্সিতেও নজর কেড়েছেন মহেশ। সেই প্রতিভাবান ফুটবলারকে একেবারেই হাতছাড়া করতে চায় না ইস্টবেঙ্গল। তাই আগামী তিন বছরের জন্য নওরেম মহেশের সঙ্গে চুক্তি সেরে রাখল লাল-হলুদ। অর্থাৎ ২০২৬-২৭ মরশুম পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে মহেশের। শুক্রবার লাল-হলুদ ক্লাবের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে এ কথা ঘোষণা করা হয়।
সোমবার থেকে আইএসএল অভিযান শুরু করছে ইস্টবেঙ্গল। জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে ঘরের মাঠেই খেলবে কার্লেস কুয়াদ্রাতের টিম। তার আগেই মহেশের সঙ্গে চুক্তি বাড়িয়ে নিল লাল-হলুদ। চুক্তির পর মণিপুরী ফুটবলার বলেছেন, ‘ইস্টবেঙ্গল আমার কাছে শুধু ক্লাব নয়, পরিবারও। এই ক্লাবের হয়েই আমি আইএসএল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। সেই ক্লাবের হয়ে আরও অনেকগুলো বছর জড়িয়ে থাকার সুযোগ পাচ্ছি, এর থেকে ভালো খবর আর কী হতে পারে।’
লাল-হলুদ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত আবার বলেছেন, ‘মহেশের চুক্তি বাড়ানোটা টিমের জন্য় খুব ভালো খবর। যে দিকে আমরা ক্লাবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তাতে ও একটা উদাহরণ। ক্লাবের হয়ে তো বটেই, জাতীয় টিমের হয়েও মহেশ চমৎকার পারফর্ম করেছে। ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার হয়ে ওঠার সব মশলা আছে ওর মধ্য়ে।’
মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ২৪-২৫ কিলোমিটার দূরে নাম্বোল নওরেম গ্রামে বাড়ি তাঁর। মহেশের বাবা ইনগো কাঠের কাজ করে কোনও মতে সংসার চালাতেন। তাঁর নিজের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অকালেই শেষ হয়ে গিয়েছিল দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে। তাই চাইতেন মহেশকে ফুটবলার তৈরি করতে। লাল-হলুদের তারকা ফুটবলের প্রথম পাঠ শুরু হয় গ্রামেরই এক দাদার কাছে।
আরও পড়ুন: ৭ বছর পর ইউরোপা লিগে খেলছে লিভারপুল,প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও বড় জয় ক্লপের দলের
ছেলের উৎসাহ দেখে প্রবল আর্থিক অনটনের মধ্যেও মহেশকে তাঁর বাবা ভর্তি করে দিয়েছিলেন গ্রামের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। অল্প দিনের মধ্যেই নজর কেড়ে নেন তিনি। ডাক পান বীরচন্দ্র মেমোরিয়াল স্পোর্টিং ক্লাবে। মণিপুরের এই প্রতিষ্ঠান থেকেই উঠে এসেছেন সুরেশ সিংহ, রোশন সিংহের মতো তারকারা। বীরচন্দ্র ক্লাবে খেলতে খেলতেই সুযোগ পান শিলং লাজং এফসিতে।
লাজংয়ের যুব দলে মাত্র একটা মরশুম খেলেই নজর কেড়ে নেন মহেশ। ২০১৮ সালে মূল দলে অভিষেক ম্যাচেই জোড়া গোল করে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। তার পরে কেরালা ব্লাস্টার্সে সই করেন তিনি। কিন্তু খেলার সুযোগ না পেয়ে যোগ দেন আই লিগের ক্লাবের সুদেভাতে। সেখান থেকেই ২০২১-২২ মরশুমে লোন-এ ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেন। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি নেওরেম মহেশকে।
Leave a Reply