ক্রিকেট দেখতে পছন্দ করেন, সিনেমার পোকা, সাফল্যের আসল রহস্য ‘মায়ের হাতের রান্না’- কলকাতায় এসে অকপট প্রজ্ঞা


রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ এখন শুধু ভারতীয় দাবা নয়, বিশ্ব দাবাতেও রীতিমতো প্রভাব ফেলেছেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিশ্বমঞ্চে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকেও একেবারে ভেবলিয়ে দিয়েছেন প্রজ্ঞা। দাবা বিশ্বকাপের ফাইনাল টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়িয়েছিল প্রজ্ঞার হার না মানা লড়াইয়ের কারণে। শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞানন্দকে রানার্স হতে হলেও, তাঁপ প্রতিভায় মুগ্ধ বিশ্ব।

সেই প্রজ্ঞানন্দই এবার হাজির কলকাতায়। আসলে এশিয়ান গেমসের আগে জাতীয় শিবির এবং টাটা স্টিল চেস ব়্যাপিড অ্যান্ড ব্লিটসে অংশ নিতে প্রজ্ঞা এসেছেন তিলোত্তমায়। আর তাঁকে নিয়ে উদ্বেলিত এই শহরও। কলকাতায় এর আগেও এসেছেন প্রজ্ঞা। ২০১৮ সালে একই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে প্রথম বার তিলোত্তমায় পা রেখেছিলেন প্রজ্ঞানন্দ। তবে সেই সময়ের প্রজ্ঞার সঙ্গে বর্তমান ১৮ বছরের গ্র্যান্ডমাস্টারের তফাৎ আকাশ-পাতাল। ভারতে দাবার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কাণ্ডারি নিঃসন্দেহে বিশ্বনাথন আনন্দ। আর প্রজ্ঞানন্দ তরুণ প্রজন্মকে দাবায় উৎসাহিত করছেন।

মাত্র ১৮ বছর বয়সে সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর রহস্যের কথা বলতে গিয়ে প্রজ্ঞা দাবি করেছেন, যোগাসন, মেডিটেশনের পাশাপাশি নিয়মানুবর্তিতা এবং মায়ের হাতের তৈরি খাবারই তাঁর সাফল্যের রসায়ন। ইনডাকশন কুকার নিয়ে ছেলের সঙ্গে সর্বত্র ভ্রমণ করেন প্রজ্ঞার মা। এদিন তারকা দাবাড়ু বলছিলেন, ‘মা আমার বড় সাপোর্ট। মানসিক সাপোর্ট। আমার এবং দিদির জন্য। মা সব কিছুর খেয়াল রাখে। আমি নির্দিষ্ট কোনও ডায়েট মানি না। ম্যাচের আগে ভারতীয় খাবার খেতে পছন্দ করি। প্রত্যেক ম্যাচের আগে মা আমার জন্য রান্না করে। এভাবেই চলে আসছে। পাশাপাশি যোগাসন এবং মেডিটেশন করি।’

দাবার পাশাপাশি ফুরফুরে মেজাজে থাকতে সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন প্রজ্ঞা। তামিল ছবিই বেশি পছন্দ। ভিডিয়ো গেম একেবারেই নাপসছন্দ। তবে অবসরে ক্রিকেট দেখতে তিনি পছন্দ করেন। ভারতের খেলা থাকলেই টিভি চালিয়ে বসে পড়েন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন তাঁপ পছন্দের প্লেয়ার। তার অন্যতম কারণ, ভারতীয় স্পিনারও দাবা খেলতে পছন্দ করেন। প্রজ্ঞা তাই বলেওছেন, ‘আমি ক্রিকেট দেখি। ভারতীয় দলের খেলা দেখতে ভাল লাগে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন আমার প্রিয় খেলোয়াড় কারণ ও দাবা খেলতে পছন্দ করে।’

তাঁর মধ্যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা থাকলেও, এই বছর অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছে শিরোপা। প্রজ্ঞানন্দ অবশ্য বলছিলেন, ‘আমার এখনও অনেক কিছু শেখা বাকি। আমি প্রতি দিন উন্নতি করছি। এখন যেখানে আছি, তার থেকে অনেক উপরে উঠতে পারি। আমার মধ্যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে এবার বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ দিকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। শারীরিক ভাবে সেরা জায়গায় ছিলাম না। ছোটবেলা থেকেই খারাপ পজিশনে চলে গেলে নিজে পথ খুঁজে বের করে খেলাটা নিজের পক্ষে করে নিতাম। শুরু থেকেই জেতার জন্য লড়াই করি। তবে সেটা সহজ নয়। বিশ্বকাপে কখনও ড্রও প্রয়োজন ছিল।’

বিশ্বনাথন‌ আনন্দের যোগ্য উত্তরসূরি বলা হচ্ছে প্রজ্ঞাকে। তবে ভিশি স্যারের উপর নিয়ে প্রজ্ঞানন্দ একেবারে মুগ্ধ। তিনি বলেছেন, ‘ভিশি স্যারের থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। ওঁর অ্যাকাডেমি থেকেই শিখেছি। নিয়মিত ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। দাবার ট্যাকটিক্যাল দিকটা ছাড়াও আমি ওঁর সঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করি। যেমন মানসিক এবং শারীরিক দিক। দাবা প্রসঙ্গেও। ওঁকে দেখে অনেক কিছু শিখেছি। ক্রোয়েশিয়ার গ্লোবাল চেসে ওঁকে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই।’

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হলেও, কার্লসেনের থেকে কিন্তু অনেক কিছু শিখেছেন বলে দাবি করেছেন প্রজ্ঞানন্দ। বলেছেন, ‘কার্লসেনের সঙ্গে কথা বললেই নতুন কিছু শেখার সম্ভাবনা থাকে। শেষ ১০ বছর ও বিশ্বদাবা শাসন করছে। বিশ্বকাপের পরও আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। ওর খেলাটার প্রতি স্বচ্ছ ধারণায় আমি মুগ্ধ। ওর সঙ্গে আলোচনা করলে আমার খেলায়ও উন্নতি হবে।’ মা, বাবাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে গিয়ে দেখা করেছিলেন বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পর। সেই প্রসঙ্গে ১৮ বছরের তারকা বলেন, ‘আমার ট্রেনিং সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমার মা, বাবাকে নিয়েও জিজ্ঞেস করেন। পরিবার এবং বাবার চাকরির বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। আমাকে কিছু পরামর্শও দেন।’



Source link

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*